Sunday, September 13, 2015

নীল পরী নিলাঞ্জনা



নীল পরী নিলাঞ্জনা

 
খুব সাধারন না মেয়েটা আবার খুব চালাক ও না... কিছুই বুঝতো না ফেসবুকের। নতুন একাউন্ট খুলে প্রথম ফেসবুক ইউজ করছে বলে কথা। পরিচিত-অপরিচিত সব ফেরেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। মেয়েটার এক ফেরেন্ডেভ আইডিতে সব কিছুতেই এক ছেলে কম্যান্ডস করে। এমন কি সেই ছেলেটি ছিল মেয়েটির ফেরেন্ডের নিয়মিত আড্ডা-ফান এর উপকরণ। নিয়মিত সেই ছেলেটির কথা শুনতে শুনতে মেয়েটা খুব বিরক্ত হতো এবং এক প্রকার জেদ জন্মালো এটা ভেবে কি এমন ছেলে যাকে নিয়ে নিয়মিত আড্ডা দিতে হবে। তারপর একদিন মেয়েটা তার ঐই ফেরেন্ডের একটা স্ট্যাটাস এ এবার ছেলেটার কম্যান্ডস দেখলো। কম্যান্ডসটিতে এমন কিছু ছিলো যে ছেলেটি মেয়েটার ফেরেন্ডকে পছন্দ করে আর ভালোবাসে, এমন টাই মনে হচ্ছিলো এবং তাই মনেও করেছে। এটা দেখে মেয়েটা জেলাস ফিল করে। কিন্তু কেন এই অনুভুতি হলো তা সে নিজেও জানে না।

এরপর হঠা একদিন মেয়েটাকে ফেরেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। প্রথমে মেয়েটা রিকোয়েস্ট টি এক্সেপ্ট করতে চায়নি রাগে কিন্তু পরে কি ভেবে যেন এক্সেপ্ট করলো। স্বাভাবিক নিয়মেই প্রথমে যা হয় চ্যাটিং-এ তাই হলো। হ্যায়-হ্যালো, কেমন আছো ইত্যাদি ইত্যাদি......।
তারপর একদিন ছেলেটি মেয়েটার ফেরেন্ডের কথা জিজ্ঞাস করে যে সে কেন ফেসবুকে আসেনা, তাকে একটু আসতে বলো। খুব রাগ হয় যদিও, রাগ হওয়ার কোন কারন নেই তবুও কেন যানি খুব রাগ হয় মেয়েটার। ছেলেটার কথা মতো সে তার ফেরেন্ডকে ফোন দিয়ে ফেসবুকে আসতে বলে। এরপর নিয়মিত চ্যাট হতো ছেলেটার সাথে মেয়েটার। নিয়মিত ছেলেটাই মেয়েটাকে একটি সম্পুন্ন গান লিখতো এভাবেই কথা চলছিলো তাদের মাঝে।

তখন ছিলো শীতকাল ভোর ৪টা এমন সময় মেয়েটা অনলাইনে আছে। চ্যাটে কেউ নাই শুধু সেই ছেলেটি। খুব অবাক হয়ে যায় মেয়েটা, আর ছেলেটাকে বলে এতরাতে ফেসবুকে সে কি করে। ছেলে বলে ব্রোডব্যান্ড তো কম্পিউটার অন করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই আর কি। মেয়েটা ছেলেটাকে ম্যাসেজ করতো কিন্তু উত্তর পেতো না সময় মতো, এতে মেয়েটার খুব খারাপ লাগত। মেয়েটা ছেলেটাকে হয়তো ভালোবেসে ফেলেছিলো মনে মনে কিন্তু বলার সাহস ছিলোনা। তাই সে মজা করে একদিন ছেলেটাকে বলে বলতো “আমার সোনার বাংলা” এর পরের লাইন কি? ছেলেটা বুঝতে পাড়ে কিন্তু সেও মজা করে বলে “আমি তোমায় ভালোবাসি” এটা। এই রকম লুকোচুরি খেলা খেলতে খেলতে ছেলেটা মেয়েটাকে বলে “তুমি কি আমাকে ভালোবাস” মেয়েটা বলে না তোমাকে ভালোবাসলেও তো তুমি বাসবে না তাই না। এরপর ছেলেটা মেয়েটাকে মোবাইল নম্বর দেয় আর ফোন দিতে বলে। মেয়েটা ফোন দেয় তাপর ছেলেটা ফোনে মেয়েটাকে “আই লাভ ইউ” বলে। তারপর তাদের বেশী ভাগ সময় ফোনে কথা হতো। খুব ভাল দিন কাটছিলো তাদের। এর মাঝে ছেলেটা তার অতীত এর কথা মেয়েটাকে বলে। মেয়েটা সব শুনে ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সব কিছু বলার পরে ছেলেটা নিজ থেকেই মেয়েটাকে এড়িয়ে চলতো এই ভেবে যে হয়তো মেয়েটা তাকে মনে মনে খারাপ ভাবছে। কিন্তু ছেলেটার এড়িয়ে চলা মেয়েটা সহ্য করতে পারতো না বরং সবটা শুনে মেয়েটা আরও বেশী ভালোবেসে ছেলেটাকে।

ছেলেটার অতীত হলো তার আগে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো কিন্তু সে তাকে ছেড়ে চলে যায়। ছেলে আগের চেয়ে কম যোগাযোগ করতো কিন্তু মেয়েটা সময় মতো কথা না হলে খুব কান্না করতো। ছেলেটা মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করে না এই ভেবে যে যদি আগের গার্ল ফেরেন্ডের মতো চলে যায় ফেলে। এটা ছেলেটা মুখে না বললেও মেয়েটা বুঝতে পারতো কিন্তু ছেলেটাকে বুঝতে দিতো না। মেয়েটাও মনে মনে নিজেকে দোষী ভাবতো এই ভেবে তা হলো মেয়েটা যে ইনফরমেশন গুলি দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট ইউজ করছে তা সঠিক না যেটাকে বলা হয় ফেইক একাউন্ট। এটা ছেলেটা জানতো না। মেয়েটা অনেক বার বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছু কিছু কারনে তা অনেক বার বলতে যেয়েও বলতে পারেনি ভালোবাসার মানুষকে হারাবার ভয়ে। ছেলেটা মেয়েটার সাথে মাঝে মাঝে দেখা করতে চাইতো কিন্তু মেয়েটা চাইতো না কারন ধরা পড়ে যাবে এই ভয়ে। একদিন ছেলেটা তার কিছু বন্ধুদের সাথে মেয়েটা যেখানে থাকে সেইখানে ঘুরতে যায়। আর যাওয়ার আগে মেয়েটাকে বলে। তখন মেয়েটা যাকে এতো ভালোবাসে সেই মানুষটাকে একবার দেখার জন্য ঠিক করে নেয় সব সত্যি বলে দিবে আজ সে। ছেলেটা রাতে বাসে উঠলে মেয়েটাকে ফোন দেয় যে সে বাসে এখন। মেয়েটা সারা রাত জেগে থাকে কারন সে খুব ভয় পেতো রাতে জার্নি করাটা। আর ভাবছিলো যে কি করে, কি ভাবে ছেলেটাকে সব কিছু বলবে। পরের দিন ভোর বেলা মেয়েটা ছেলেটাকে সব কিছু বলে দেয়।

এরপর ছেলেটি কথা শুনে তেমন কিছু বলে না। মেয়েটা ভাবে হয়তো ছেলেটা কিছুই মনে করেনি। কারন কথাগুলো শোনার পরেও ছেলেটা আগের মতোই যোগাযোগ করে। কিন্তু দু-এক দিন পর ছেলেটা আর মেয়েটার ফোন ধরে না। ধরলেও ঠিক মতো কথা বলতো না। পরে একদিন বলে যে সে যেন তাকে ফোন না দেয় কারন মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক হয় না। 

কিন্তু মেয়েটা তো শুধু তার নাম ঠিকানা মিথ্যা বলেছে এটাই কি সব থেকে বড় ভুল? মেয়েটার ভালোবাসা কি তা হলে কিছুই না? 

*************************************************

(এই গল্পটি ভালোবাসার গল্প কবিতা ব্লক ও ফেসবুক পেজ পাঠকের নিজের জীবনের ঘটনা    অবলম্বনে সত্যি গল্প, যা পাঠক নিজে ইনবক্সে পাঠিয়েছেন) 


লেখিকাঃ নীল পরী নিলাঞ্জনা (ফেসবুক আইডির নাম অনুসারে)


ভাল লাগলে পোস্ট টি অবশ্যই শেয়ার করুন :  
[ ভাল লাগলে পোস্ট টি অবশ্যই কমেন্ট বা শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের  সাহ বারে, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]

No comments:

Post a Comment